ডেস্ক রিপোর্ট:
প্রবীর মিত্র, ঢাকাই চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী যুগের জনপ্রিয় অভিনেতা, আর বেঁচে নেই। রোববার (৫ জানুয়ারি) রাত ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে প্রবীর মিত্রের মরদেহ এফডিসিতে নেওয়া হবে, যেখানে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা তাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে বাদ জোহর এফডিসিতেই তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর জানিয়েছেন, এফডিসি থেকে মরদেহ চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে প্রবীর মিত্রকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গত ২২ ডিসেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় প্রবীর মিত্রকে। অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তিনি ব্লাড লসসহ প্লাটিলেটের ঘাটতিতে ভুগছিলেন।
১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তার পুরো নাম ছিল প্রবীর কুমার মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চায় যুক্ত ছিলেন। স্কুলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয়ে তার হাতেখড়ি।
১৯৬৯ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘জলছবি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে রূপালি জগতে প্রবেশ করেন প্রবীর মিত্র। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালে। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি কয়েকটি সিনেমায় নায়ক হিসেবে কাজ করলেও পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
১৯৮২ সালে ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননাতেও ভূষিত হন। তবে তিনি একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পদক পাননি।
প্রবীর মিত্রকে সর্বশেষ দেখা গেছে ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বৃদ্ধাশ্রম’ সিনেমায়। দীর্ঘ পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে তিনি চার শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে— ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’ প্রভৃতি।
প্রবীর মিত্রের মৃত্যুতে চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসাধারণ অভিনয়গুণে তিনি দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিলেন। তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
Leave a Reply